ইউক্রেনে রুশ হামলা মোকাবিলায় অস্বস্তিকর অনুভূতির কয়েকজন অপেক্ষমাণ মানুষ এই ব্যারিকেড গড়ে তুলেছিলেন। গতকাল শনিবার সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এদিন সন্ধ্যায় রাশিয়ার রাজধানী কিয়েভমুখী সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে ব্যারিকেড পুরো তৈরি: বালুভর্তি বস্তা, কাঠের বাক্স ও ইট স্তূপ করে সেখানে নীল-হলুদের জাতীয় পতাকা টানানো হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম নির্মম ও প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকা একটি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা কোন মাত্রার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন, এই বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনও ভ্রম নেই।
কিন্তু কিয়েভ ও এর আশপাশে হাজারো মানুষের মতো তারাও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যা কিছু তাদের পক্ষে সম্ভব তা তারা করবেন। ৫০ বছর বয়সী আলেক্সান্ডার যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত রেমিংটন শটগান হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাকে এক বন্ধু এটি সংগ্রহ করে দিয়েছেন। বলেন, গতকাল আমি গুলি করা অনুশীলন করেছি। আজ আমি বের হয়ে এখানে এসেছি, এটিই আমার প্রথম শিফট। সত্যি কথা বলতে কী, আমি আতঙ্কিত। তিনি আরও বলেন, অবশ্যই যদি কোনও ট্যাংক আসে তাহলে দৌড় দেওয়া ছাড়া আমাদের করার কিছু নেই। কিন্তু ট্যাংক ছাড়া অন্য কিছু হলে আমরা লড়াই করবো।
এদিকে রাজধানীজুড়ে এমন অঙ্গীকার করা মানুষের সংখ্যা অনেক। যা চিন্তা করা যায়নি তা যখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে এবং অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে এবং মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, তখন এমন অঙ্গীকারে বলিয়ান হয়ে রুখে দাঁড়াচ্ছেন কিয়েভের কিছু মানুষ। শনিবারের আগে টানা দুই রাত রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যুদ্ধবিমান বোমাবর্ষণ করেছে। এতকিছু করার একটাই লক্ষ্য ছিল দ্রুত কিয়েভ দখল করা। কিন্তু কিয়েভ রুখে দাঁড়ায়।
জনগণের এই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব ভালোই বুঝেতে পেরেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনিও রাজধানীর সড়ক থেকে স্মার্টফোনে লাইভ ভিডিও প্রচার শুরু করেন। তিনি পালিয়ে গেছেন বলে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছিল সেটা উন্মোচন করেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, যুদ্ধ এখানে: নিরাপদে সরে যাওয়া নয়, আমার প্রয়োজন অস্ত্র।
যুদ্ধের জন্য কর্মী সংগ্রহের কেন্দ্রগুলোতে সব বয়সী নাগরিকদের ভিড়। কেউ কেউ অবসরে থাকলেও সংকটময় সময়ে আবার লড়াই করতে অস্ত্র হাতে নিচ্ছেন। অনেকেই রুশ সেনাদের সামনে মুখোমুখি হয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। রুশ সেনাদের লক্ষ্য করে তাদের চিৎকার ও কথা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। আলেক্সান্ডার চেক পয়েন্টে যে ব্যারিকেড গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে রুশ সেনাবাহিনীর অপেক্ষায় থাকা কারোরই সামরিক প্রশিক্ষণ নেই। কয়েকজনের হাতে রয়েছে শটগান, একজনের হাতে পিস্তল। যাদের কোনও অস্ত্র নেই তারা বলছেন ছুরি বা হাতুড়ি ব্যবহার করবেন।
এদিকে এমপি কিরা রুডিক টুইটারে বলেন, আঙ্গিনায় আজ টিউলিপ ও ড্যাফোডিল চাষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আমাকে অস্ত্র চালনা এবং কিয়েভে পরের হামলার জন্য প্রস্তুত হতে হচ্ছে। আমরা কোথাও যাচ্ছি না। এটি আমাদের শহর, আমাদের ভূখণ্ড, আমাদের মাটি। এগুলোর জন্য আমরা লড়াই করবো। অন্যরা সরকারের বিভিন্ন নির্দেশ মেনে চলছেন। যেমন, পেট্রোলবোমা তৈরি, রুশ নাশকতাকারীদের খোঁজ এবং দখলদার সেনাবাহিনীকে দ্বিধায় ফেলতে সড়কের সংকেত চিহ্ন সরিয়ে ফেলার কাজ করছেন নাগরিকরা। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
The post হাতুড়ি-পিস্তল হাতে ব্যারিকেডে রুশ সেনাদের অপেক্ষায় ইউক্রেনীয়রা appeared first on bd24report.com.