
ইউক্রেন-রাশিয়ার বর্তমান সংকট তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সামরিক অভিযানের প্রথম দিনই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে৷ বাংলাদেশেও ইউক্রেন পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
আড় এই ধাক্কা সামলাতে নাগরিকরা হিমসিম খাচ্ছেন৷ ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাব হওয়ার আশঙ্কা আছে৷
বিশ্ব বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১০২. ৩২ ডলারে উঠেছে৷
তবে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না বলে জানান, সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷ তিনি বলেন , ‘‘এতে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কিছু ব্যবসায়ী যে-কোনো অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো জন্য বসে থাকেন৷ তেলের দাম বাড়ানো হলে সেটাকে ইস্যু করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা৷ গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর কী পরিস্থিতি হয়েছিল, আমরা তা দেখেছি৷’’
তার মতে, ‘‘সরকারকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনে ঋণ করতে হবে৷ সরকার এডিবি, বিশ্বব্যাংক, অথবা সৌদি আরব, কাতার থেকে দ্বিপক্ষীয় ঋণ নিতে পারে৷ এর আগেও সরকার নিয়েছে৷’’
আর গ্যাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র এলএনজি আমদানি করি৷ সেটার দাম বাড়ানোও ঠিক হবে না। সরকার এখন সেবাখাতে তার পাওনা টাকা আদায় করেও তা দিয়ে ভর্তুকি দিতে পারে৷’’
বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অনেকগুলো প্রকল্পে কাজ করছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানি করেন রাশিয়া থেকে। এছাড়া তৈরি পোশাকের নতুন বাজার হিসাবেও বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি। আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য, যার বেশিরভাগটাই খাদ্য পণ্য।
বিশেষ করে গমের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভুট্টার ২০ শতাংশ আসে এই দুটি দেশ থেকে। আবার তৈরি পোশাক রপ্তানির নতুন বাজার হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকেও।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের প্রভাব এর মধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তাদের ব্যবসার ওপর।
এদিকে যুদ্ধ হওয়ার কারনে পণ্যবাহী জাহাজগুলো এখন কৃষ্ণসাগরে যেতে চাইছে না। ফলে দেশের রপ্তানিকারকরাও চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই তার সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর মতো বড় প্রকল্পের কাজ চলছে রাশিয়ার সহায়তায়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘‘ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়ে এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে এর কারণে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে৷ এর প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের ওপরেও পড়বে৷’’
কোন কারনে যদি এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় তাহলে, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার আওতা আরও বাড়লে বাংলাদেশ কী করবে, বাংলাদেশকে সেই আগাম পরিকল্পনা নিয়ে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।
বার্তাবাজার/আর এম সা