
অন্য ব্যবসার আড়ালে নিষিদ্ধ ‘চায়না দুয়ারী’ এখন তৈরি হচ্ছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। এই জালে একবার মাছ ঢুকলে আর বের হতে পারে না। জালের বিশেষ ফাঁদে আটকা পড়ে ছোট অন্য জলজ প্রানীও। শুরুর দিকে পদ্মা নদী তীরে এই জালের ব্যবহার হলেও পরে প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পরে। ক্ষতিকারক হওয়ায় এই জালের ব্যবহার নিষিধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্য ব্যবসার আড়ালে নিষিদ্ধ এই ‘চায়না দুয়ারী’ এখন তৈরি হচ্ছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের খোলামুড়া এলাকায়। প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে বাহিরের থেকে গেট বন্ধ করে চলে ফ্রেমের ফাঁদ তৈরির কাজ। জেলেদের কাছে দিন দিন এই জাল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া বিশেষ কায়দার ফ্রেমে ফাঁদ তৈরির পর সেগুলো চলে যায় উপজেলার জিনজিরা বটতলা বাজার ও মুন্সীগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে। তবে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে ম্যানেজের চেষ্টা করেন কারখানা মালিক মেহেদী হাসান।
দেশে মৎস্য শিকারের জন্য এ জালের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। ‘চায়না দুয়ারী’ নামের এই জাল অনেকটা বাঁশের দুয়ারীর আদলে তৈরি করা হলেও এই জাল মুলত মাছ শিকারের একধরনের ফাঁদ। এটিকে কেউ আবার বলেন চায়না জাল বা ম্যাজিক জালও। চায়না থেকে জাল সংগ্রহ করে হাল্কা ও মিহি বুননের এই জাল সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা আর দেড় ফুট প্রস্থ হয়ে থাকে। ভেতরে লোহার চার কোনা রড দিয়ে বানানো হয় অনেকগুলো ফ্রেম। প্রতিটি ফ্রেমেই থাকে বিশেষ কায়দার ফাঁদ। বাজারে প্রতিটি ‘চায়না দুয়ারী’ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছে এই জালে মাছ শিকার বন্ধ করা না গেলে হুমকির মুখে পরবে দেশের মৎস্যখাত।
নদীর কম গভির অংশে পাতা হয় এই জাল। ছোট ফাঁসবিশিষ্ট এই জালে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রানী একবার ডুকলে জালের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অনেক বিপন্ন প্রজাতির জলজ প্রানীও আটকা পরে মারা যায়। ক্ষতিকর হওয়ায় নিষিদ্ধ জালের তালিকায় নাম উঠেছে ‘চায়না দুয়ারীর। এছাড়াও জালের গিটের দুরুত্ব সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের কম হওয়ায় প্রচলিত আইন অনুযায়ীও এটি নিষিদ্ধ। তাই এর বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে মৎস্য বিভাগ।
চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করা বিমল হালদার নামের এক জেলে বলেন, এই ফাঁদে সব ধরনের মাছই আটকা পড়ে। আগে আমরা কারেন্ট জাল ব্যবহার করতাম এখন চায়না দুয়ারী ব্যবহার করি। এই জালে খরচ কম আয় বেশি।
পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বিকেল হলেই ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়। সারারাত নদীতে রাখার পর সকালে জাল তুলে আনলে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা বলেন, চায়না দুয়ারী ব্যবহারে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও অন্য জলজ প্রানী ধ্বংস হচ্ছে। তাই এটি একটি নিষিদ্ধ জাল। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যে মোবাইল কোটের মাধ্যে চায়না দুয়ারীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বড় অভিযান পরিচালনা করেছি।
কেউ এই চায়না দুয়ারী তৈরি, বিক্রি বা ব্যবহার যাতে করতে না পারে এজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। এর পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অন্য ব্যবসার আড়ালে গোপনে এই চায়না দুয়ারী তৈরী করছে। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রানা/বার্তাবাজার/এ.আর