
ঘুট ঘুটে অন্ধকার রাতে একটু চাঁদের আলো যেমন পথিকের কাছে হয়ে ওঠে আশার আলো। স্বপ্ন দেখায় আরো কিছু পথ পারি দেওয়ার। ঠিক তেমনি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক নিজ নিজ বাড়ি ফিরে আসায় আশার আলো দেখছে এবং আরো কিছু পথ একসাথে পারি দেওয়ার স্বপ্ন বুনছে পরিবারগুলো।
তাদেরই একজন নাবিক মনসুরুল আমিন খান গিনি। সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর হতাশা মাড়িয়ে সাতক্ষীরা শহরের নিজ বাড়ি ‘এখানেই নোঙর’ পৌঁছেছেন তিনি। মনসুরুল আমিন খান গিনি সাতক্ষীরার নুরুল আমিন খান ওরফে সেলিম খানের ছেলে। মনসুরুল আমিন খান গিনির উপস্থিতিতে আলো ঝলমল করে উঠছে বাড়িটি।
ইউক্রেনে হামলার ভয়াল অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মনসুর বলেন, স্থানীয় সময় ২ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠি আমরা। ওপরে গিয়ে দেখি বিস্ফোরণ হয়েছে। আগুন জলছে, ধোয়া উড়ছে। আমরা দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করলেও ততক্ষণে হারিয়েছি আমাদের সহকর্মী এক নাবিককে। তাকে রেখেই আমাদের দেশে ফিরতে হলো।
তিনি বলেন, ইউক্রেনে অলিভিয়া বন্দরে নোঙর করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকরা জাহাজ থেকে দ্রুত নেমে আসেন। এর পর এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। স্থানীয়ভাবে একটি বোট এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিরাপদ স্থানে রাখার পর আরও নিরাপত্তার জন্য তাদের রাখা হয় বাংকারে।
মনসুর আমিন খান গিনি বলেন, সে দৃশ্য ভয়াবহ। চারদিকে বিকট শব্দ। আকাশজুড়ে ধোয়ার কুণ্ডলী। আমরা জাহাজ বিধ্বস্ত হতে দেখেছি, আমরা আগুন দেখেছি, আমরা মৃত্যু দেখেছি। চোখে কোনো হতাহত না দেখলেও আমাদের আতঙ্কের শেষ ছিল না।
তিনি আরো বলেন, মাঝেমধ্যে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি বাড়িতে। কিন্তু আতংক আর হতাশা কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। তবু ভরসা ছিল একদিন বাড়ি ফিরবোই।
মনসুর আরও বলেন, শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার, শিপিং করপোরেশন এবং সর্বোপরি রোমানিয়া দূতাবাসের আন্তরিক চেষ্টায় আমরা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারায় সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
মনসুরুল আমিন খানের বাবা বিএডিসির সাবেক কর্মকর্তা নুরুল আমিন খান ও মা মর্জিনা খানম ছেলেকে কাছে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তার স্ত্রী আশরুকা সুলতানা ও তিন সন্তান পুত্র ফাহিমি, ফারহান এবং কনিষ্ঠ পুত্র ফারদিনের চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠল।
বার্তাবাজার/না. সা.